■ সারাদেশ
ইরাকে বিস্ফোরণে ভোলার আলীর মৃত্যু, পরিবারে শোকের মাতমভাগ্য বদলের আশায় মাত্র ১৬ বছর বয়সে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভোলার মো. আলী। সাত বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফিরে পরিবারকে একটু স্বচ্ছলতা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। নতুন ঘর তোলার স্বপ্নপূরণ হলেও, সেই ঘরে আর উঠা হলো না আলীর। কর্মস্থলে ভয়াবহ বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের বিছানাতেই নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মো. আলী ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাফেজ সালেহ আহমেদ ও নাজমা বেগম দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে ষষ্ঠ। পাঁচ বোনের পর একমাত্র ছেলে ছিলেন আলী। মসজিদের মুয়াজ্জিন পিতার সামান্য আয়েই চলতো অভাবী সংসার। প্রবাসে থাকা মামা ফরিদের সহযোগিতায় ১৬ বছর বয়সে ইরাকে পাড়ি জমান তিনি।
প্রবাসজীবন মোটামুটি ভালোই চলছিল। সাত মাস আগে দেশে ফিরেছিলেন আলী। পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব এলেও তখন বলেছিলেন, “আগে একটা পাকা ঘর করব, তারপর আবার এসে বিয়ে করব।” সেই ঘর হয়েছে বটে, কিন্তু ঘরে ফিরলেন না আলী—ফিরলেন না আর জীবিত শরীরে।
নিহতের মামা মো. ফরিদ জানান, বাগদাদ শহরে একটি বাড়িতে জেনারেটরের কাজ করতেন আলী। গত শনিবার রাতে জেনারেটর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগুন ছড়িয়ে পড়লে, লাইন বন্ধ করতে গিয়ে গরম তেলে দগ্ধ হন তিনি। শরীরের ৯৮ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন আলী।
আলীর বড় বোন ইয়াসমিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাগ্য বদলের আশায় ভাই বিদেশ গিয়েছিল। এখন যখন পরিবারে একটু শান্তি আসার সময়, তখনই সে চলে গেল।’
অসুস্থ বাবা ও বৃদ্ধা মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো পাড়া। স্বজন, প্রতিবেশীরা ভিড় করছেন আলীর বাড়িতে।
নিহতের ছোট ভাই মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে মনে হয় ভাইয়ের মরদেহ দেশে আনা সম্ভব হবে না। আমরা অনুরোধ করেছি, তাকে যেন ইরাকেই, হযরত আলী (রা.)-এর মাজারের পাশে দাফন করা হয়।’
মন্তব্য করুন