স্টাপ রিপোর্ট
৩১ মে ২০২৫, ১১:৩৭ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

তরুণদের কাছে প্রত্যাশা পরিচ্ছন্ন রাজনীতি

জয়নুল আবদিন ফারুক 

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বিএনপি আজকে আবারও একা এবং সেটা যতটা নিজেদের দায়ে, তারচেয়ে অনেক বেশি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমের ক্রমাগত মিথ্যাচার, ১৬ বছর ধরে আওয়ামী সুবিধাভোগী শ্রেণি, পুরনো বন্দোবস্তের শীর্ষে অবস্থান করে কথিত নতুন বন্দোবস্তের কথা বলা একটি গোষ্ঠী আবারও বন্দুক ঘুরিয়ে ফেলেছে বিএনপির দিকে। যেকোনো মূল্যে তারা বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

এই অবস্থায় জামায়াতসহ পরিস্থিতির সুবিধাভোগী অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো বরাবরের মতোই চুপ। সবসময়ের মতো এবারও পরিস্থিতি থিতিয়ে গেলে সুবিধাজনক অবস্থানে গিয়ে বন্ধু হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে এই গোষ্ঠীগুলো। এই সুযোগে তারা নিজেদের পুনর্বাসন ও ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত, যার ফলে আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশ সুবিধা পাচ্ছে।

এই অবস্থায় যদি বিএনপিকে নার্ভাস এবং দলীয় ঝামেলায় জর্জরিত বলে মনে হয়, তাহলে ভুল ভাবা হচ্ছে। বিএনপি অন্তর্কোন্দল, খুনোখুনি, চাঁদাবাজি, প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত নয়। বরং বিএনপিকে ঘিরে আবারও মিডিয়া ট্রায়াল শুরু হয়েছে।

দেশের কয়েকটি মিডিয়া গ্রুপের বিভিন্ন গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা যায়, বিএনপিকে টার্গেট করে একের পর এক মিথ্যা এবং ফ্যাব্রিকেটেড অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। দেশের যাবতীয় প্রান্তিক পর্যায়ের অপরাধের জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পর্যায়ে সেলিব্রেট করে মব সৃষ্টি করা উশৃঙ্খল জনতার মধ্যে বিএনপির কোনো পদ-পদবী নেই এমন লোকদের ছবি প্রচার করে তাদের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এমনকি কোনো মিছিলে হাঁটা সাধারণ কর্মীকেও বিএনপির নেতা হিসেবে প্রচার করে বাহাদুরি নেয়া হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক মারামারি অথবা এই ধরনের বিভিন্ন ঘটনাতেও বিএনপির নাম জড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসা এই দলটির ইমেজ নষ্ট করার পাঁয়তারা চলছে।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রে অবস্থান করছে। সারাদেশে দলটির কোটি নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষী। স্বভাবতই তাদের সবাইকে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণে রাখা বিএনপির পক্ষে সম্ভব হয় না, সেই দায় দল হিসেবে বিএনপি মাথা পেতে নেয় সবসময়। তারই অংশ হিসেবে বিএনপির কোনো নেতার বিরুদ্ধে যখনই অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। এটি বিএনপির চলমান শুদ্ধি অভিযান, যা অন্য কোনো দল মোটাদাগে করছে না। বরং অন্যরা নিজেদের দোষ ঢাকতে ব্যস্ত। বিএনপি যেখানে সততা বজায় রেখে বহিষ্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেখানে অন্যরা শুধু জানাজানি হবে এই ভয়ে নিজেদের দলের ভেতরে থাকা অপরাধীদের নিয়ে কোনো কথা বলছে না।

বিএনপির কর্মীরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে আবারও বিএনপিকে নিয়ে চক্রান্ত চলছে। দেশে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যেখানে নির্বাচন বা গণতন্ত্রের কথা বলাই যেন অপরাধ। চলমান সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফায়দা লুটতে চাইছে বিভিন্ন গোষ্ঠী। অথচ বিএনপি সব সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে লড়াই করেছে।

আরও একটি ব্যাপার লক্ষণীয়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে নির্বাচনের কথা বললেও তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপি কোনো ধরনের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেনি। অথচ বারবার নির্বাচনের বিরোধিতা করা দল ও গোষ্ঠীগুলোকে নিয়মিত শোডাউন, গণসংযোগ, প্রার্থী ঘোষণা করতে দেখা যাচ্ছে। যেটি সুস্পষ্ট স্ববিরোধীতা। অনেক তরুণ নেতাকে দেখা যাচ্ছে, চোখ ধাঁধানো শোডাউন করছেন। অর্থের উৎস নিয়ে কথা উঠলে সেসব পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। অথচ তরুণদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল পরিচ্ছন্ন রাজনীতি। তারা নিজেরাও বারবার নতুন বন্দোবস্তের কথা বলছেন কিন্তু আচরণে সেটা প্রকাশ পাচ্ছে না।

অথচ বিএনপি দল হিসেবে সব সময় এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন, দেশে গণতন্ত্রের যাত্রাকে সুসংহত রাখার জন‍্য কাজ করেছে, রাজপথে লড়াই করেছে, দলের নেতাকর্মীরা জেল খেটেছে, জীবন দিয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান দীর্ঘদিন যাবত নির্বাসনে, খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন। জটিল সব অসুখ নিয়েও ন্যূনতম মানবিক আবেদনে সাড়া না পেয়ে উন্নত চিকিৎসাটুকুও নিতে পারেনি বিএনপি চেয়ারপারসন। অথচ বিএনপি এখনো গণতন্ত্রের সংগ্রামে অটল।

দেশের উন্নয়নে প্রতিযোগিতা করতে বিএনপি সবসময় প্রস্তুত। ২০০৭-২০০৮ সালে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর যে নির্যাতন নেমে এসেছিল, সেই স্মৃতি এখনো তাজা। আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মী ঘরে থাকতে পারেনি, লাখের ওপর মেরিটহীন মামলা করা হয়েছে তাদের নামে। গণতান্ত্রিক লড়াই করার শাস্তি হিসেবে তাদেরকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে, গুম-খুন-গ্রেফতার করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতেও এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে সেটা অত্যন্ত হতাশাজনক ব্যাপার হবে।

দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শহীদ জিয়াউর রহমান যে পথ দেখিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া সেই পথেই হেঁটেছেন এবং তারেক রহমানও সেই পথেই চলছেন। যেকোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। তাই আপনারা আজ যে পথে হাঁটবেন বলে গল্প করেন, সে পথে হেঁটে শহীদ হওয়া, পঙ্গুত্ব বরণ করা বিএনপির কর্মীরা অবাক হয়।

রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বারবার দেখেছি কেউ কোনো কু-পরিকল্পনা করলে, অন্যায়ভাবে কোনো কিছু করতে চাইলে তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হয়। এর সর্বশেষ ও ভালো উদাহরণ শেখ হাসিনা।

সবমিলিয়ে আপনাদের কাছে এটুকুই প্রত্যাশা, আসুন আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। শেখ হাসিনার ১৬ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে প্রতিদিন নতুনের পথ ধরে হেঁটে আমরা একটা অন‍ন্য উচ্চতায় দেশকে পৌঁছে দেই। তবেই ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শহীদদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে।

লেখক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যের প্রতীকঃ সালাহউদ্দিন আহমদ

তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজের নাম বহালের নির্দেশনা

আগে জুলাই সনদ পরে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে: নাহিদ

রাষ্ট্র সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের বিপরীতে চলছে সরকার: টিআইবি

বিএসফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দিলো বিএসএফ

মে মাসে দেশের জন্য প্রবাসীযুদ্ধাদের উপহার ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স

বেসামরিক পদে জনবল নেবে নৌবাহিনী, আবেদন ফি ২২৩ টাকা

নির্বাচনের ৪ বছর পর মেয়র ঘোষণার দাবিতে বিএনপি প্রার্থীর মামলা

৩০ জেলা জজসহ ২৫২ বিচারককে বদলি

নারীকে লাথি মারা বহিষ্কৃত জামায়াত নেতা আকাশ গ্রেফতার

১০

ভোলায় শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে কাঙ্গালী ভোজ

১১

প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বেড়েছে

১২

হজে গিয়ে আরও এক বাংলাদেশির মৃত্যু, সংখ্যা বেড়ে ১২

১৩

এক ভাগে একাধিক শরিক, কোরবানি কি বিশুদ্ধ হবে?

১৪

ওয়ানডেকে বিদায় বললেন ম্যাক্সওয়েল

১৫

দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে গাজার শিশুরা

১৬

পোল্যান্ডের নতুন প্রেসিডেন্ট নাওরোকি

১৭

জুলাই আন্দোলনে ডান চোখ হারানো রকির বাম চোখও নষ্টের পথে

১৮

জার্মানির হাসপাতালে আগুনে মৃত্যু ৩, আহত ৩৫

১৯

চাঞ্চল্যকর পিয়াল হত্যা মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানা গ্রেফতার

২০