প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মানুষ বলছে আপনার সরকার এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির দু’জন প্রতিনিধি আছেন। তারা উপদেষ্টা, আবার এনসিপি সংগঠনও করে। যদিও অফিসিয়ালি না, তবে সবাই সবকিছু জানে। যদি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, তাহলে এনসিপি মার্কা দু’জনকে পদত্যাগ করতে বলুন। যদি পদত্যাগ না করে, আপনি বিদায় করুন। মনে করবেন না, কেয়ামত পর্যন্ত আপনাদের আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইব।
গতকাল শনিবার বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। এতে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে দলটির নেতাকর্মীরা যোগ দেন।
ড. ইউনূসকে ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদেশি এক নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। তিনি রোহিঙ্গা করিডোরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চান। দেশের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কোনো জাতীয় দায়িত্ব বিদেশি নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। আমরা দাবি করছি, সেই উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। নির্বাচনমুখী যেসব জরুরি সংস্কার করা দরকার, তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। যদি কোনো দিন নির্বাচনের দাবিতে এই সরকারকে ঘেরাও করতে হয়, তা হবে জাতির জন্য একটি দুর্ভাগ্য। আপনি কি চান আপনার সঙ্গে আমাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হোক? জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক?
তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুন। সংস্কার ও বিচার চলমান প্রক্রিয়া। যারাই সরকারে আসুক না কেন, তা চালু থাকবে। অনন্তকাল বিচার ও সংস্কারের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কণ্টকাকীর্ণ করা যাবে না।
তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আছে, আমরা চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম। এখন কিছু বিদেশিদের দোসর আছে। আমরা তাদের অপসারণের কথা বলছি। আর যারা এনজিও মার্কা উপদেষ্টা আছেন, তাদের অপসারণ করুন। না হলে সসম্মানে বিদায় নিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে।
তিনি বলেন, দেশে খুনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি এক দিনে হয়নি। জাতিসংঘ স্বীকৃত খুনি শেখ হাসিনা স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সব গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছিল। ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে মারণাস্ত্রের মাধ্যমে। সামরিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। হেলিকপ্টারের গানশিপ থেকে গুলি চালানো হয়েছে। শেখ হাসিনা এই গণহত্যা চালানোর পরও তাঁর এবং এই দলের মধ্যে অনুশোচনা নেই।
সালাহউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু জুলাই গণহত্যা করেনি, সাত হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে খুন করেছে। অত্যাচার করে হত্যা করেছে, গুম করেছে, অপহরণ করেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্য সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে। অত্যাচার-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে ঢাকার মাটিতে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন।
এদিকে সমাবেশ ঘিরে গতকাল খুলনা ছিল উৎসবমুখর। বিকেল ৩টায় সমাবেশ শুরু হলেও সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা খুলনায় আসতে থাকেন। দুপুর ২টার পর মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় খুলনা।
মন্তব্য করুন