শাহাদাত হোসেন শাওন। সামছুন্নাহার ও বাছির আলম দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার ছোটজন ছিল সে। স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের সেবা করার পাশাপাশি পরিবারের অভাব দূর করার। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে গেল। গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে যোগ দিলে পুলিশের গুলিতে উড়ে যায় তার মাথার খুলি। অত্যন্ত মিশুক সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মা এখনো শোকগ্রস্ত।
জানা যায়, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের খাজুরিয়া এলাকার বাসিন্দা বাছির আলম। পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে। তিনি হালিম ও ফুসকা বিক্রি করে পরিবার চালাতেন। অভাবের মধ্যেই শাওনকে যাত্রাবাড়ীতে একটি মাদরাসায় ভর্তি করেন। সে ৫ আগস্ট পতাকা হাতে নিয়ে হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে বিজয় মিছিলে যোগ দেয়। মিছিলটি যখন হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর উঠে তখন পুলিশের গুলিতে শাওনের মাথার খুলি উড়ে যায়। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় তার সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে তার পরিবারের লোকজন গিয়ে হাসপাতাল থেকে ওই বিকেলে তার লাশ বাসায় নিয়ে আসে। পরদিন সেনবাগের খাজুরিয়ার সর্দারপাড়ায় তাকে দাফন করা হয়।
শাওনের ভাই হানিফ বলেন, আমার ভাই শাওন ছোট বয়সেই সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার স্বভাব গড়ে তুলেছিল। প্রতিবেশী জাবেদ বলেন, শাওন ছিল অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও শান্তশিষ্ট ছেলে। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।
শাওনের বাবা বাছির আলম বলেন, আমার ৪ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে শাওন ছিল সবার ছোট। আমার ছেলে জীবিত অবস্থায় প্রায়ই বলত বাবা আমি বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে পরিবারের দুঃখ ও অভাব-অনটন দূর এবং দেশের জন্য কাজ করব। কিন্তু তার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
শিশু শাওন বন্ধুদের বিনা পয়সায় ফুসকা ও হালিম খাওয়াত বলে জানান তার মা সামছুন্নাহার। তিনি বলেন, আমার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শাওন ছিল অত্যন্ত ভদ্র-নম্র। সে তার সহপাঠী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করত। তাকে আমরা ভুলতে পারছি না কোনোভাবেই। এখন তার হত্যায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি চাই।
মন্তব্য করুন