ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘর্ষ টানা তৃতীয় দিনে অব্যাহত রয়েছে। রবিবারও চলেছে ব্যাপক পাল্টাপাল্টি হামলা। দুই পক্ষের প্রাণহানি বেড়েছে এবং আঘাতের লক্ষ্যবস্তু সম্প্রসারিত হয়েছে—যা দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে। বিশ্বনেতারা সহিংসতা বন্ধ ও সংযমের আহ্বান জানালেও লড়াইয়ে কোনো বিরতির আভাস নেই।
প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে
শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত ইরান একাধিক ধাপে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইসরায়েলের দিকে। এতে এখন পর্যন্ত ১৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১০ শিশুও রয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে প্রায় ৩৮০ জন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘নাগরিক হত্যার জন্য ইরানকে অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে হবে।
[caption id="attachment_4991" align="alignnone" width="300"] ইসরায়েলি উদ্ধারকর্মীরা ১৫ জুন বাট ইয়ামে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংসস্তূপে তল্লাশি চালাচ্ছেন। ছবি : এএফপি[/caption]
রবিবার দুপুরে ইরান নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় আবারও সাইরেন বেজে ওঠে। তবে কিছুক্ষণ পর জানানো হয়, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হতে পারে।
অন্যদিকে শুক্র থেকে শনিবার পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ইরানে কমপক্ষে ১২৮ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছে শত শত মানুষ।
সরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকায় ইরানে মসজিদ, স্কুল ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরানিদের অস্ত্র কারখানাগুলোর আশপাশের এলাকা ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে।
লক্ষ্যবস্তু সম্প্রসারণ
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রবিবার রাতে তারা তেহরানে ৮০টিরও বেশি স্থানে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলা শুধু সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় নয়, বরং তেলভিত্তিক অবকাঠামো ও সরকারি ভবনেও বিস্তৃত হয়েছে।
তেহরানে রবিবার দুটি জ্বালানি মজুদ স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েল শনিবার ঘোষণা দেয়, তারা তেহরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং ইরানে ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফরম ধ্বংস করেছে।
ইরানের সংবাদমাধ্যম রবিবার জানায়, ইসরায়েল তেহরানের পুলিশ সদর দপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর ও ইসফাহানের একটি প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় হামলা করেছে।
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের জ্বালানি স্টেশনে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের ভূখণ্ডের দিকে ছোড়া সাতটি ড্রোন প্রতিহত করা হয়েছে। পাশাপাশি ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছুড়েছে বলে জানিয়েছে।
পারমাণবিক কূটনীতি ব্যাহত
এই সংঘর্ষের মধ্যে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা চলছিল। ওমানে রবিবার ষষ্ঠ দফার আলোচনার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে।
তেহরান জানিয়েছে, যতক্ষণ ইসরায়েল হামলা চালিয়ে যাবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ইসরায়েল কৌশলে কূটনীতি বানচাল করতে এসব হামলা চালাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ইসরায়েল ‘নতুন লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে।
তেহরান অভিযোগ করেছে, আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (আইএইএ) ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এবং তারা সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা সীমিত করার হুমকি দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
বিভিন্ন দেশ অঞ্চলজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সংঘর্ষ প্রশমনের আহ্বান জানাচ্ছে।
আরাঘচি রবিবার বলেন, ইরানের উপকূলবর্তী বড় একটি গ্যাস স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা ছিল বিপজ্জনক এবং এর মাধ্যমে পুরো অঞ্চল, এমনকি গোটা বিশ্বকেই সংঘাতে জড়ানো হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, তাদের কাছে এমন ‘দৃঢ় প্রমাণ’ রয়েছে যে ইরানে ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও ঘাঁটিগুলো সহায়তা দিয়েছে।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও ইরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং উভয় পক্ষকে সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার আবারও ‘একটি চুক্তিতে পৌঁছনোর’ আহ্বান জানান। তবে একই দিনে তিনি ইরানকে সতর্ক করে বলেন, যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করে, তাহলে ‘মার্কিন সামরিক বাহিনীর সম্পূর্ণ শক্তি’ দিয়ে জবাব দেওয়া হবে।
সম্পাদক:
উপ-সম্পাদক:
যোগাযোগের ঠিকানা: 05 Rue Lally-Tollendal, 75019 Paris.
ফোন:
বিজ্ঞাপন বিভাগ:
ই-মেইল: infosylbdnews24@gmail.com