অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ১৯ মাসের বেশি সময় আগ্রাসন চালিয়ে আসছে ইসরাইলি বাহিনী। ইসরাইলের টানা আগ্রাসনে স্থানীয়দের জীবনে নেমে এসেছে দুর্যোগ। দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে গাজার শিশুরা।
কিশোর ইয়াদ কাসেম গাজা শহরের বাসিন্দা। ইসরাইলি হামলায় একাধারে বেশ কবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে তার পরিবার। বর্তমানে গাজা শহরের আল-কাতিবা স্কয়ারের কাছে তাঁবু খাটিয়ে থাকছে তারা।
প্রতিদিন সকালে উঠে জ্বালানির জন্য কাঠ খুঁজতে বের হয় ইয়াদ। অবরোধের কারণে খাবার সরবরাহ পুরো উপত্যকাতেই দুর্লভ হয়ে উঠেছে। তবে ভাগ্যক্রমে কিছু পেয়ে গেলে তা রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয়।
ডয়েচে ভেলেকে ইয়াদ বলে, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন কাঠ খুঁজতে যাই, আমার একেবারে শক্তিই থাকে না। খাবার জন্যও কিছু পাওয়া যায় না। সকালের রোদ শরীরকে পুরোপুরি জ্বালিয়ে দেয়। আমার দুর্বল লাগে। একটু খেলাধুলা করলেও ক্লান্ত লাগে। খাবারের জন্য কোনো ময়দা, গোশত বা অন্য কিছুই আমাদের কাছে নেই।’
গাজার স্যুপ কিচেন থেকে সরবরাহ করা স্যুপ বা রান্না করা ডাল খেয়েই দিন কাটাচ্ছে ইয়াদের পরিবার। সে জানায়, সকালে স্যুপ কিচেন থেকে দেওয়া স্যুপ খেয়েই তাদের দিন শুরু হয়। কিন্তু এতে ক্ষুধা নিবারণ দূরে থাক, কিছু খাওয়ার অনুভূতিও হয় না।
ইয়াদ বলে, যুদ্ধের পর থেকে গাজায় সব ধরনের খাদ্য-উপকরণ দুর্লভ হয়ে গেছে। আটা-ময়দা, চাল-সবজি, গোশত কিছুই সহজে পাওয়া যায় না। একটি মাত্র টমেটো কিনতেও ১০ ইসরাইলি শেকেল খরচ করতে হয়। কিন্তু গাজাবাসীর কাছে কোনো অর্থই আর নেই।
খোলা জায়গায় তাঁবুতে সব সময়ই উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটে ইয়াদের। ঘুমাতে গেলেও সতর্ক থাকতে হয় কখন ইসরাইলি বোমা হামলা শুরু হয়।
ইয়াদ বলে, ‘রাতে কখনো বোমা হামলা শুরু হলে আমরা একসঙ্গে জেগে থাকি। একটি ছোট শার্পনেলে আমাদের যে কারো মৃত্যু হতে পারে। আমরা খুব কমই ঘুমাতে পারি।’
ইয়াদ জানায়, তার বাবা একেবারেই ঘুমান না। তিনি জেগে থাকেন, যাতে করে সবার প্রতি লক্ষ রাখতে পারেন।
ইয়াদ বলে, ‘আমরা সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকি। এমনকি ঘুমের মধ্যেও স্বপ্নে আমরা বোমা হামলা হতে দেখি।’
একই স্থানে আরেকটি তাঁবুতে নিজের পরিবারের সঙ্গে থাকে ১২ বছরের শিশু মরিয়ম আশুর। ইসরাইলি হামলায় তাদেরও বেশ কয়েকবার ঘর ছাড়তে হয়েছে।
মরিয়ম বলে, প্রতিদিন সকাল ৬টায় উঠে পানি সংগ্রহ ও স্যুপ নিয়ে আসতে বের হয় তারা। এর জন্য বহুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর গাজার সবকিছুই বদলে গেছে বলে জানায় মরিয়ম। স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে, খাবার বা পানি কিছুই নেই, এমনকি পরার মতো ভালো কাপড়ও হারিয়ে গেছে তাদের।
যুদ্ধের আগে সকালে উঠে স্কুলের জন্য তৈরি হতো মরিয়ম। কাপড় পরে, নাশতা করে স্কুলে যেত সে। কিন্তু এখন সকালে উঠে স্যুপ কিচেনের বাইরে লাইনে দাঁড়াতে হয় তাদের।
মরিয়ম জানায়, সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকে তারা। এমনকি ঘুমাতে যেতেও ভয় হয় মরিয়মের।
সে বলে, ‘আমার ভয় হয় যদি ঘুমাতে যাই, এরপর আর উঠতে না পারি! অথবা ঘুম থেকে ওঠার পর দেখি কোনো স্বজন নিহত হয়েছেন।’
মরিয়ম আল্লাহর কাছে দোয়া করে যেন গাজার যুদ্ধ শিগগিরই বন্ধ হয়।
মন্তব্য করুন