যুক্তরাষ্ট্র কি অর্থনৈতিক পতনের দিকেই এগোচ্ছে? বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশে এখন ঋণের পাহাড় জমেছে।পরিমাণ ৩৬.২ ট্রিলিয়ন ডলার! আর সেই ঋণের চাপেই কি এক ভয়াবহ ধ্বংসের মুখে মার্কিন অর্থনীতি?ডয়চে ব্যাংকের এক বিশ্লেষণ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ধীরে ধীরে “হাজার কাটা ঘা”-এর মতো ক্ষয়ে যাচ্ছে। ফরচুন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নোটে ব্যাংকটির বিশ্লেষক জিম রিড মন্তব্য করেছেন,“আমরা হয়তো শেষের দিকেই পৌঁছে গেছি, শুরুর অনেক পেরিয়ে এসেছি।”
ঋণের বোঝায় নুইয়ে পড়ছে অর্থনীতি
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ঋণ যত বাড়ছে, ততই বেড়ে চলেছে সুদের চাপ। অথচ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সে তুলনায় তেমন বাড়ছে না। ফলে এই ঋণ ভবিষ্যতে কতটা টিকবে, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে গেছে।মার্কিন রাজনীতিকরা ঋণ কমাতে নানা উদ্যোগ নিলেও, তা অনেকের চোখে “অতি সামান্য, অনেক দেরিতে” নেওয়া চেষ্টা। পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন এই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে,এই ঋণ কীভাবে সামলাবে আমেরিকা?
রেটিং কমালো মুডিজ, সতর্কতা বাড়ছে
গত সপ্তাহেই বড় ধাক্কা খেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।ক্রেডিট রেটিং কমিয়ে দিয়েছে মুডিজ। ‘Aaa’ থেকে ‘Aa1’ করা হয়েছে মার্কিন ঋণের মান। মুডিজ জানিয়েছে, বাজেট ঘাটতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সক্ষমতা প্রশ্নের মুখে।
ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড ভিসা’ দিয়ে ঋণ শোধ?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য এ সংকটের সমাধানে নতুন পথ দেখাচ্ছেন। তাঁর দাবি, ‘গোল্ড কার্ড ভিসা’ স্কিম থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই শোধ করা যাবে জাতীয় ঋণ। একইসঙ্গে তাঁর সরকার খরচ কমিয়ে, কার্যকারিতা বাড়ানোর কথাও বলছে।
তবে সমস্যা হলো কর কমিয়ে রাজস্ব কমিয়ে দিলে সরকারের খরচ চালানোও কঠিন হয়ে পড়ে। একদিকে খরচ কমাতে হবে, অন্যদিকে আয় কমছে।এই দুইয়ের ভারসাম্য রাখতে গিয়েই জটিলতা বাড়ছে।
কর ছাড়ের বিল নিয়ে বিভক্ত মত
ট্রাম্প প্রশাসন এখন নতুন এক ট্যাক্স বিল পাস করাতে চায়। যার আওতায় ২০১৭ সালের কর ছাড় বাড়ানো হবে এবং ‘টিপস ইনকাম’ ও ওভারটাইম আয়ের ওপর কর মওকুফের কথা ভাবা হচ্ছে।
সরকারের দাবি, এই পদক্ষেপ জাতীয় ঋণের চাপ কমাতে সহায়ক হবে এবং জিডিপি বৃদ্ধির হার বাড়বে। তবে কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (CBO) বলছে, কর ছাড় বাড়ালে রাজস্ব আরও কমে যাবে। আর নতুন কোনো আয়ের উৎস না খোঁজায় ২০২৫ সালের মধ্যে ঋণের পরিমাণ পৌঁছে যাবে জিডিপির ২২০ শতাংশে!
শেষ ভরসা কি ফেড?
অনেকেই বলছেন, যদি বাজারে আস্থা আরও কমে যায়, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডই হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ভরসা। তখন তারা সুদের হার কমিয়ে বা আরও অর্থনীতি উদ্দীপক পদক্ষেপ নিতে পারে।
UBS ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রধান মার্ক হ্যাফেলও মনে করেন, এখনই বড় ধস দেখা না গেলেও, ভবিষ্যতে বাজার অস্থির হলে ফেড অবশ্যই হস্তক্ষেপ করবে। তবে তিনি এটিও বলেন,“এই রেটিং ডাউনগ্রেড হেডলাইন ইস্যু হলেও, এখনই তেমন মৌলিক পরিবর্তন হচ্ছে না।”
বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র আজ এক চরম আর্থিক পরীক্ষার মধ্যে দাঁড়িয়ে। একদিকে ঋণের পরিমাণ ভয়াবহ রকমের বাড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ও নীতিগত সিদ্ধান্তে গতি নেই। সময়ই বলে দেবে যুক্তরাষ্ট্র এই আর্থিক ঝড় সামলে উঠতে পারবে, নাকি ধসের দিকেই এগোচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি।
মন্তব্য করুন