শাহজালালের ওরস মানেই মাজারে হাজার হাজার ভক্ত-আশেকানদের মিলনমেলা। ভক্তদের নাচ গানের তালে তালে চলতো অশ্লীলতাও। গাজার আসর বসাটাও ছিল একটা সাধারণ ব্যাপার। তবে এবার প্রথা ভেঙে অসামাজিকতা ও অশ্লীলতা বন্ধ করে শুরু হয়েছে ওরসের কার্যক্রম।
প্রতি বছরের মতো এবার ভক্ত-আশেকানদের আসর বসেনি মাজার এলাকায়। অসামাজিকতা ও অশ্লীলতা বন্ধ রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। সকাল থেকে পুলিশের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে শেষ পর্যন্ত অসামাজিকতা কতটুকু ঠেকানো সম্ভব হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
প্রতিবছর আরবি মাসের ১৯ ও ২০ জিলকদ দুই দিনব্যাপী হযরত শাহজালাল (র.) এর ওরস অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতিবছর ওরসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত-আশেকান জড়ো হন শাহজালালের মাজারে। মাজারে গিলাফ ছাড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ওরসের আনুষ্ঠানিকতা।
এ বছর অসামাজিকতা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণভাবে ওরস সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও মাজার কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রশাসন শান্তিপূর্ণ-সুশৃঙ্খলভাবে মাজারের পবিত্রতা রক্ষা করে ওরস সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এরইমধ্যে সিলেটের সকল দলমতের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে।
রোববার সকালে শাহজালালের মাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ভিড় জমিয়েছেন মাজারের ভক্ত-অনুরাগীরা। সকাল ১০টার দিকে মাজার কর্তৃপক্ষের গিলাফ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ওরসের আনুষ্ঠানিকতা। দলে দলে ভক্ত-অনুরাগীরা প্রবেশ করছেন মাজারে। চারপাশে ‘লালে লাল, বাবা শাহজালাল’ স্লোগানে মুখর মাজার এলাকা।
এদিকে প্রতিবছর ওরসে মাজারের আশপাশের এলাকায় ছামিয়ানা টাঙিয়ে আসর বসান ভক্তরা। তবে রোববার সকাল থেকে কোনো আসর বসাতে দেখা যায়নি। মাজারের পেছনে একটি জায়গায় বসে ভক্তদের মিলাদ পড়তে দেখা গেছে। তাছাড়া সার্বিক নিরাপত্তায় অস্থায়ী পুলিশ বক্স স্থাপন ছাড়াও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপর থাকতে দেখা গেছে।
এর আগে ওরস উপলক্ষে গত শুক্রবার বিকেলে মাজার এলাকা পরিদর্শন করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. রেজাউল করিম। পরে তিনি মাজার মসজিদ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন।
মতবিনিময় সভায় পুলিশ কমিশনার বলেন, শিরক ও বিদআতমূলক কার্যক্রম পরিহার করে এ বছর ওরস সম্পন্ন হবে। ভক্তদের নিরাপত্তার স্বার্থে মাজার প্রাঙ্গণে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশ সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকে মাজার প্রাঙ্গণে দায়িত্ব পালন করবেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, নামাজ ছাড়া মাজারে যাতে কেউ সেজদা না দেন, শিরক-বেদাতমূলক কাজে জড়িত না থাকেন এ লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য লিফলেট বিতরণ ও মাজার আঙিনায় পোস্টার স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নারীরা পর্দার সঙ্গে অবস্থান করবেন। তাছাড়াও কেউ যেন মদ-গাঁজার আসর না বসান সে বিষয়টি তদারক কমিটি সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখবে।এবং সেই সাথে সচেতন নাগরিকদের ও ভুমিকা আশা করেন তিনি।
মন্তব্য করুন