বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল দিনগুলোতেও পেশাগত দায়িত্ব জারি রাখেন সাংবাদিক হাসান মেহেদী। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায়। সেখানে হঠাৎ পুলিশের ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার শরীর। আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। স্বল্পবেতনে কাজ করা হাসানের মৃত্যুর পর থমকে যায় তার সংসারের চাকা। অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় দুই মেয়ের জীবন। সাহায্য-সহযোগিতায় কোনোরকমে দিনাতিপাত করছে তার রেখে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম দিকে গত ১৮ জুলাই প্রাণ হারান ৩১ বছর বয়সে পা দেওয়া সাংবাদিক হাসান। তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন। তার বড় মেয়ে মায়মুনা বিনতে নিশার বয়স সাড়ে চার বছর। ছোট মেয়ে মেহের আশবিন আনিসার বয়স ১৬ মাস। হাসান যখন দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন, তখন আনিসা আধো আধো বুলিতে ‘বা বা বা’ বলছিল। এখন সে স্পষ্ট ভাষায় বাবা ডাকতে পারলেও তা শোনার জন্য উপস্থিত নেই জন্মদাতা। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালীর বাউফলে জন্ম ও বেড়ে ওঠা হাসানের। শৈশব থেকেই সাংবাদিকতার প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই শুরু করেন লেখালেখি। গ্রাম থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী কলেজে ইন্টারমিডিয়েট এবং অনার্সে পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতাকেই বেছে নেন জীবন চলার পথ হিসেবে।
তার বাবা মোশাররফ হাওলাদার স্ট্রোকের রোগী। হার্টে ব্লক আছে, চারবার স্ট্রোক করেছেন তিনি। মা মাহমুদা খাতুন গৃহিণী। হাসানের ১৩ বছর বয়সি এক ভাই মাদরাসায় পড়ছে। গ্রামের বাড়ি বাউফলে থাকেন তারা। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় সাংবাদিক হাসানের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন অন্যরা। নিজের পরিবারের খরচ মিটিয়ে যৎসামান্য পারতেন বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন। তাতেই কোনোরকমে চলত তার বাবার সংসার। কিন্তু হাসানের মৃত্যুর পর তারা পথে বসে গেছেন।
শহীদের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম বলেন, শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন সংগঠনের আর্থিক অনুদানেই চলছে তার সংসার। সাংবাদিক হাসান হত্যার বিচারসহ এখন যেন ছোট দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে নির্বিঘ্নে জীবনযাপন করতে পারেন, সেই আকুতি তার। এ জন্য সরকারের কাছে একটি চাকরির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সম্পাদক:
উপ-সম্পাদক:
যোগাযোগের ঠিকানা: 05 Rue Lally-Tollendal, 75019 Paris.
ফোন:
বিজ্ঞাপন বিভাগ:
ই-মেইল: infosylbdnews24@gmail.com