আওয়ামী লীগ সরকাররে পতনের পর ভেঙ্গে দেয়া হয় দেশের সকল বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কমিটি। ২১ আগস্ট ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা দেয় দ্রুত অ্যাডহক কমিটি গঠনের। কিন্তু কমিটি বিলুপ্তির সাড়ে ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন পায়নি।
ইতিমধ্যে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য ক্রীড়া পরিষদে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অ্যাডহক কমিটি না থাকার কারনে স্থানীয়ভাবে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাচ্ছে না। যে কারণে ক্রীড়াক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে সিলেট।
অবশ্য হতাশার মাঝেও আশার আলো হচ্ছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার এ্যাডহক কমিটি ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব এস এম হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে (স্মারক নং- ৩৪.০০.০০০০.০৭১.৯৯.০৫৬.২৪.১৭৬) সমস্যা সমূহের কার্যক্রম সুষ্ঠু, সক্রিয়, সচল ও নির্বিঘ্ন রাখার প্রয়োজনে দেশের সকল বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা সমূহের ক্রীড়া কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। স্থানীয় প্রেক্ষাপটে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ক্রীড়া অনুরাগী , ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট সম্পৃক্ত সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে তার অনুমোদনের নিমিত্তে ক্রীড়া পরিষদে প্রেরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা
এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার গালিব চৌধুরী বলেন, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, সিলেটের সাধারণ শাখা -১ থেকে গত ৪ মে, খান মো. রেজা-উন-নবী বিভাগীয় কমিশনার সিলেট, স্বাক্ষরিত স্মারকে (নং:০৫.৪৬.০০০০.০০০.০০৫.১৮.০০০১.২৫.১৫২) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক প্রেরিত রুপরেখা অনুযায়ী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা সিলেটের এ্যাডহক কমিটির প্রস্তাব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার অফিস সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে, পদাধিকার বলে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবী আহবায়ক ও সিলেট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে সদস্যসচিব করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি অনুমোদনে জন্য পাঠানো হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন-বিসিবির সাবেক পরিচালক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী। তাকে ক্রীড়া সংগঠক সর্বজন গ্রহণযোগ্য, ক্রীড়াঅনুরাগী , ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, বাংলাদেশ জাতীয়দলের সাবেক ক্রিকেটার এনামুল হক জুনিয়র, সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রীড়া সংগঠক মোস্তফা কামাল পাশা, আম্পায়ার অনুমোদনের অপেক্ষায় অ্যাডহক কমিটিও আম্পায়ার এসোসিয়েশন সিলেটের সভাপতি আশরাফ হোসেইন আরমান, সাবেক খেলোয়াড় কোচ ও ক্রীড়া সংগঠক আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী অনি, ক্রীড়া সংগঠক ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ, সাংবাদিক বদরুদ্দোজা বদর, ক্রীড়া সম্পৃক্ত ছাত্র প্রতিনিধি নাঈম শেহজাদ।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সংশ্লিষ্টদের উচিৎ দ্রুত কমিটি গঠন করা। প্রকৃত খেলোয়াড় ও সংগঠকরা যেন সুযোগ পায়, তাহলে ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতি হবে। কে কোন দল করে, সেটা বড় বিষয় নয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে কাজে লাগাতে হবে। ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতি মুক্ত রাখলে তবেই কাঙ্কিত লক্ষ্য অর্জিত হবে।
মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস ডেলোদী বলেন, সিলেট বরাবরই সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। ক্রীড়া ক্ষেত্রে তার পরিমান অনেক বেশি। অবিলম্বে সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠন করে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। তাই যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বার কমিটি গঠন করে ক্রীড়াঙ্গনের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী অনি বলেন, কমিটি না থাকার কারনে আমরা কোন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। বর্তামানে সিলেট বিভাগের সকল কার্যক্রম ক্রিকেট বোর্ড সরাসরী তদারকি কর্ করে। তাই অনেক ক্ষেত্রে তাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। স্থানীয় কোন কার্যক্রমও করা যাচ্ছে না। তাই যত তাড়াতাড়ি কমিটি গঠন হবে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য তা মঙ্গল বয়ে আনবে। এ বছর আমরা বয়সভিত্তিক খেলা এবং সিলেট বিভাগ জাতীয় লীগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেও তাদের রিসিপশন কোন কিছুই করতে পারছিনা।
সাংবাদিক এডিটর বদরুদ্দোজা বদর বলেন, শুনেছি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে অনুমোদনের জন্য তাদের প্রেরিত রুপরেখা অনুযায়ী একটি কমিটি প্রেরণ করা হয়েছে। তবে সুযোগ পেলে সবাইকে নিয়ে একসাথে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ বলেন, আমরা চাই দ্রুত কমিটি গঠন করা হোক। প্রথমত খেলাটাকে গুরুত্ব দেয়া যেন রাজনৈতিক প্রভাব না থাকে। খেলার মানুষকে আবারও মাঠ কেন্দ্রীক করা। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে সর্বস্থরের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং একক অধিপত্য থেকে বের হয়ে একটি সার্বজনীন ক্রীড়াঙ্গণ গড়ে তুলা।
মন্তব্য করুন